প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অবিশ্বাস্য গতিতে ধাবমান বিধ্বংসী ক্ষমতার সাইক্লোনটির মুখ ও স্থলভাগে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশের সুন্দরবন। আজ মঙ্গলবার শেষ রাত কিংবা আগামীকাল বুধবার নাগাদ আঘাত হানতে পারে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে।
এরমধ্যে দেশের ১৪টি জেলা এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। জেলাগুলো হলো— সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম। বুলেটিনে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান জানান, গতকাল দুপুরের পর অতি ভয়াল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সামান্য উত্তর দিকে সরে এসেছে। এটি আরও ঘনীভূত হচ্ছে এবং প্রবল শক্তি সঞ্চয় করছে। এটি কিছুটা দিক পরিবর্তন করে উত্তর, উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি আজ ১৯ মে শেষ রাত থেকে কাল ২০ মে বিকাল এই মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি জানান, আম্ফানের প্রভাবে স্থানীয় উপকূলবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় যখন অতিক্রম করবে, সেখানে বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল জেলা এবং আরও যে দ্বীপ ও চরগুলো আছে সেখানে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় ‘নোয়া’ স্যাটেলাইট চিত্রে অবলোকন করে জানা যায় যে, আম্ফানের ভয়ংকর ঘূর্ণিতে সাগর ফুঁসছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এটা ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার এবং ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের সর্বোচ্চ গতিবেগ ২২৩ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি। সন্ধ্যা ৭টায় আম্ফান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার কিলোমিটার, কক্সবাজার, মংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়াবিদরা বলছে, তীব্রতার মাপকাঠিতে এই ঘূর্ণিঝড় এর মধ্যেই অনেক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এটি গতকাল সকালে এক্সট্রিমলি সিভিয়ার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। তার মাত্র ১ ঘণ্টা পরই বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ আম্ফান একটি সুপার সাইক্লোনে বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে তীব্রতর গতিতে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, আম্ফানের স্থলভাগে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের সুন্দরবন অংশ। কেন্দ্রবিন্দু যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে আম্ফানে ক্ষতি কম হবে। তবে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবর্তন হয়ে সুন্দরবন ছাড়া দেশের অন্য অংশে আঘাত হানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, সেন্টার যদি সুন্দরবন হয়, তাহলে তো ওই স্পিডে (১৪০-১৬০ কিলোমিটার) কোনো ক্ষতি হবে না। ওই সেন্টার যদি আবার পটুয়াখালী হয়, তাহলে অনেক ক্ষতি হবে। এজন্য আগে লোকেশন ঠিক করতে হবে। সেজন্য লোকেশনকে ফিক্সড (স্থান) করার পরে স্পিডের (ঘূর্ণিঝড়ের গতির) কথা আসবে।
ভারতের বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা স্কাইমেটের প্রধান মহেশ পালাওয়াট বিবিসিকে বলেন, এই শতাব্দীতে প্রাক-মনসুন পর্বে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এটাই কিন্তু প্রথম সুপার সাইক্লোন। এর আগে ২০০৭ সালের জুনে আরব সাগরে সুপার সাইক্লোন গোনু তৈরি হয়েছিল যেটা পরে ওমানের দিকে সরে যায়।
তিনি বলেন, আম্ফান এর মধ্যেই ঘণ্টায় দেড়শ কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগসম্পন্ন ঝড়ো বাতাস সঙ্গে ‘প্যাক’ করে নিয়েছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা একটা ঘূর্ণিঝড় থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, সেটাও একটা রেকর্ড। পালাওয়াট বলেন, উপকূলের কাছাকাছি এলে এই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা সামান্য কমবে। তবে তার পরও এর বিধ্বংসী ক্ষমতাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
২১ লাখ মানুষকে নেওয়া হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে: ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উপকূলের দিকে ধেয়ে আসার প্রেক্ষাপটে ৫১ লাখ ৯০ হাজার মানুষের জন্য ১২ হাজার ৭৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, আজ সকাল থেকে মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার কাজ শুরু হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ছুটি বাতিল: আম্ফান মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.
আগামীকাল চাঁদপুরের ৫০ গ্রামে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি করবেন ( ভিডিও সহ)
শোকাবহ ১৫ আগস্ট, আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান মিজান শোক প্রকাশ করেন (ভিডিও সহ)
শোকাবহ ১৫ আগস্ট, অধ্যাপক ডা.উত্তম কুমার বড়ুয়ার শোক প্রকাশ (ভিডিও সহ)
শোকাবহ ১৫ আগস্ট, ডাঃ আবু রায়হান শোক প্রকাশ করেন (ভিডিও সহ)
শোকাবহ ১৫ আগস্ট, রোটারিয়ান মোঃ মোমেন সরকারের শোক প্রকাশ (ভিডিও সহ)
শোকাবহ ১৫ আগস্ট, মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মতিউর রহমান মিয়া চাঁনের শোক প্রকাশ (ভিডিও সহ)
2020 Powered By bioscope24.tv II Design by DATFU