জাহিদ হাসান
করোনাভাইরাস মহামারি রূপ নেয়ায় সতর্কতা হিসেবে ১৯ মার্চ থেকে নাটকের শুটিং বন্ধ ঘোষণা করে পরিচালক, প্রযোজক ও শিল্পীদের চার সংগঠন। তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি শুটিং হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড তাৎক্ষণিকভাবে শুটিং বন্ধ করে দিলেও টেলিপাড়ায় এ নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুটিং করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাট্যাঙ্গনের মানুষের পাশাপাশি সাধারণ দর্শকরাও তির্যক মন্তব্য করেছেন।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সর্বশেষ শুটিং হয় গত রোববার। নাট্যপরিচালক আদিবাসী মিজান ঢাকার অদূরে পূবাইলে ‘হাসনাহেনা’ শুটিংবাড়িতে এই শুটিং করেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শুটিংবাড়ির মালিক ইসমত আরা চৌধুরী। এ সময় অভিনেতা জাহিদ হাসান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শুটিং ইউনিট সূত্রে জানা যায়, এক বছর আগের পুরনো নাটকের অংশবিশেষ শুটিং করতে গিয়েছিলেন পরিচালক মিজান ও তার দল। নাটকের প্রথমভাগের কাজ হয়েছিল নেপালে। রোববার এর শেষ অংশ করছিলেন তারা। নাটকে জাহিদ হাসান মায়ের সঙ্গে অভিমান করে দেশের বাইরে চলে যান এবং সেখানে গিয়ে তার সবশেষ হয়ে যায়। জাহিদ ফের মায়ের কাছে ফেরত আসেন এবং ক্ষমা চান। শেষের এই অংশটুকুরই কাজ চলছিল সেখানে। এতে অংশ নিতে তিনটি গাড়িতে করে চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন বুলু, জাহিদ হাসান ও মিজান পূবাইলে গিয়েছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড তাৎক্ষণিকভাবে শুটিং বন্ধ করে দেয়। এটি নিশ্চিত করেছেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এসএ হক অলিক। তিনি বলেন, ‘পূবাইলের হাসনাহেনা শুটিংবাড়িতে এর কাজ শুরু হয়েছিল। পরে তারা (নির্মাতা) তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। ফোনে কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তারা এটি বন্ধ করে দিয়ে চলে এসেছেন।’
এর সত্যতা নিশ্চিত করে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘আমাকে মোবাইলে মেসেজ দিয়ে একজন জানিয়েছেন, পূবাইলে নাটকের শুটিং চলছে। এরপর আমি বিষয়টি সংগঠনের দায়িত্বশীলদের জানিয়েছি। এ বিষয়ে বিকাল ৫টায় টেলি কনফারেন্সে সংগঠনের জরুরি মিটিং করব। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নিষেজ্ঞা অমান্য করে শুটিং করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আমরা মার্চ মাস থেকেই নাটকের শুটিং বন্ধ রেখেছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে লকডাউন তুলে দেয়ার পর থেকেই শুটিং শুরু করার। কিন্তু এর আগেই কেউ যদি সাংগঠনিক নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করেন, তাহলে সংগঠন এই বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নেবে।’
এদিকে একই নাটক লাক্স তারকা ঊমির্লা শ্রাবন্তী করও অভিনয় করেছেন বলে খবর প্রচার হলে তিনি এটিকে বানোয়াট ও মিথ্যা বলে উলেস্নখ করেন। ঊর্মিলা বলেন, ‘যে বা যারা আমার সঙ্গে কথা না বলে আমার বক্তব্য ছাড়াই এমন সংবাদ করেছেন সেটা পুরোপুরিই ব্যক্তিগত আক্রোশ বলে মনে হচ্ছে। এই খবর প্রকাশের মাধ্যমে আমার সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর কাছে আমাকে হেয় করা হয়েছে। সবাই ফোন করে জানতে চাইছেন কেন আমি নিয়ম ভাঙলাম। অথচ আমি শুটিং করিনি। এ ধরনের দায়িত্বহীন সাংবাদিকতায় আমি হতাশ হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি গণমাধ্যমের সেই সংবাদে বলা হয়েছে, আমি নাকি পূবাইলের হাসনাহেনা শুটিং স্পটে সাত পর্বের একটি ধারাবাহিক নাটকে লুকিয়ে শুটিং করেছি। সত্যটা হলো আমাকে একটি নাটকের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনার এই অসময়ের জন্য আমি কাজটি ফিরিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া আমার মা গুরুতর অসুস্থ। আমি ছাড়া মায়ের দেখাশোনার কেউ নেই। তাকে ঘরে একা ফেলে রেখে আমি কেমন করে তিন-চারদিনের জন্য নাটকের শুটিং করতে যাবো?’
এখানেই শেষ নয়। এর আগেও নিষেজ্ঞা অমান্য করে শুটিং হয়েছে। গত মাসে শুটিং স্পটের দরজা ও জানালা বন্ধ করে শুটিং করার একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। মূল অভিযোগের তীর ছিল ‘আপনঘর-১’ ও ‘মন্দিরা’ দুটি শুটিংবাড়ি প্রতি। জানা গেছে, পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয় একটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিং শুরু করে আপনঘর-১ শুটিংবাড়িতে। যদিও বাড়িটির মালিক খলিলুর রহমান দাবি করেছেন, তার অনুমতি ছাড়াই ইউনিট শুটিং করেছিল।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাকে না জানিয়ে শুটিং হাউসের কর্মচারীকে চাপ দিয়ে তারা সকালের দিকে শুটিং শুরু করেন। কিন্তু বিভিন্ন পর্যায় থেকে আমার কাছে যখন ফোন আসে, তখন আমি সশরীরে সেখানে উপস্থিত হয়ে শুটিং বন্ধ করে দেই। সম্মিলিত সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমি। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আমার শুটিং হাউসে আর শুটিংয়ের অনুমতি দেয়া হবে না।’
অভিযুক্ত পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আরটিভিতে একটি ধারাবাহিক নাটক চলছিল। আমাদের হাতে ছিল চার পর্বের শুটিং করা ফুটেজ। নাটকটি প্রচারের জন্য দু-তিনটি দৃশ্যের প্রয়োজন হয়। এ জন্য প্রযোজক অনুরোধ করলে আমি অনুমতির কথা বলি। তিনি অনুমতির আশ্বাস দিলে শুটিং শুরু করি। দুটি দৃশ্যের শুটিং হলে ডিরেক্টরস গিল্ড থেকে আমাকে ফোন করে শুটিং করতে নিষেধ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমি শুটিং বন্ধ করি। পরবর্তী নির্দেশ না দিলে আর শুটিং করব না।’
উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত ‘মন্দিরা’ শুটিংবাড়িতেও শুটিং হয়। এ বিষয়ে হাউসটির ম্যানেজার মিন্টু খান বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রান্ত একটি কাজের শুটিং হয়। এরপর থেকে আর কোনো শুটিংয়ের সিডিউল নেই আমাদের হাউসে। নিষেধাজ্ঞা যখন উঠে যাবে তখন আমরা আবার শুটিংয়ের জন্য হাউস ভাড়া দেব।’ হাউস দুটিতে শুটিং করার খবর প্রকাশের পর নাট্যাঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে অভিনেতা, নির্মাতা, নাট্যকারসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.
আগামীকাল চাঁদপুরের ৫০ গ্রামে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি করবেন ( ভিডিও সহ)
শোকাবহ ১৫ আগস্ট, আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান মিজান শোক প্রকাশ করেন (ভিডিও সহ)
শোকাবহ ১৫ আগস্ট, অধ্যাপক ডা.উত্তম কুমার বড়ুয়ার শোক প্রকাশ (ভিডিও সহ)
শোকাবহ ১৫ আগস্ট, ডাঃ আবু রায়হান শোক প্রকাশ করেন (ভিডিও সহ)
শোকাবহ ১৫ আগস্ট, রোটারিয়ান মোঃ মোমেন সরকারের শোক প্রকাশ (ভিডিও সহ)
শোকাবহ ১৫ আগস্ট, মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মতিউর রহমান মিয়া চাঁনের শোক প্রকাশ (ভিডিও সহ)
2020 Powered By bioscope24.tv II Design by DATFU